আকুপ্রেশার থেরাপি
আমাদের সমাজে এখন প্রধান ব্যাধি শরীরজুড়ে ব্যথা; কারও কোমরব্যথা, কারও হাঁটুব্যথা কিংবা ঘাড়, গোড়ালি, পিঠ, পেশির ব্যথা। তার সঙ্গে কমন একটি ব্যথা হচ্ছে মাথাব্যথা। ব্যথা কমানোর জন্য ভূরি ভূরি ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া আর নানা ধরনের প্রলেপ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা নানা নামের মলম। যতক্ষণ ওষুধের কার্যক্ষমতা আছে, ততক্ষণ ভালো। কিন্তু সেটা কমে গেলে ব্যথা আবার ফিরে আসে। মানুষ অধৈর্য হয়ে পড়ে আর ব্যথা বাড়তে থাকে। নানা ধরনের ব্যায়াম করার চেষ্টায়ও কমতি থাকে না। কিন্তু ব্যথা থেকেই যায়।
ব্যথার জন্য প্রচলিত চিকিৎসা ছাড়াও বিকল্প চিকিৎসা আকুপ্রেশার দিয়ে ব্যথা কমানো যায়। এর ভালো দিক হচ্ছে নিজে নিজেই ব্যথা কমানোর আকুপ্রেশার করা যায়। শুধু হাত দিয়ে নিজেই আকুপ্রেশার করে অনেক জটিল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব!
কীভাবে
আকুপ্রেশার শুরু করব?
আপনার শরীরে যে ব্যথাই থাকুক, দুহাতের তালুতে দুই মিনিট ঘষতে হবে যাতে করে হাতের
তালু দুটো গরম হয়ে যায়, তারপর গরম হাত দুটো এক হাত অন্য হাতে চাপ দিতে হবে, এতে সময়
নেবেন তিন মিনিট। এবার কোমরের ব্যথার জন্য তর্জনী বা ইনডেক্স ফিঙ্গারের উপরিভাগে কবজি
থেকে আঙুলের নখ পর্যন্ত আস্তে আস্তে করে চাপ দিতে হবে, বিশেষ করে থাম্ব বা বুড়ো আঙুল
আর তর্জনী যেখানটা মিলেছে সেটায় চাপ দিলে ব্যথা অনুভব হবে, যেখানে ব্যথা হবে সেখানে
নিয়মিত ১০০ বার চাপ দিতে হবে। একটি চাপের সঙ্গে আরেকটি চাপের মধ্যে দুই সেকেন্ড বিরতি
দিয়ে চাপ দিতে হবে। ঠিক ছবিতে দেওয়া চিহ্নে চাপ দিতে হবে। দুই হাতে একই নিয়মে আকুপ্রেশার
করতে হবে, সারা দিনে দুবার খালি পেটে নিয়মিত আকুপ্রেশার করলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি
পাবেন।
আকুপ্রেশার করার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হয়
সারা দিন পয়েন্ট চাপা যাবে না। নিয়মিত সকালে খালি পেটে এবং রাতে শোয়ার আগে উত্তম সময়। অফিসে যাওয়া এবং আসার সময় গাড়িতে বসে আকুপ্রেশার করতে পারবেন। দিনে দুবেলার বেশি নয় এবং সপ্তাহে ছয় দিন আকুপ্রেশার করুন এক দিন বিরতি দিন, তাতে উপকার বেশি পাবেন। নিয়মিত আকুপ্রেশার করলে হাত ঝিনঝিন করা, অবশ হয়ে যাওয়া ও স্নায়ুজনিত সমস্যায় অনেক উপকারে আসে।
প্রাকৃতিক নিয়মে ব্যথা কমানোর জন্য আদাজল উত্তম পথ্য
প্রতিদিন দুবেলা খাওয়ার আধঘণ্টা পরে এক কাপ পানিতে এক টেবিল চামচ আদার রস দিয়ে জ্বাল দিতে হবে, সেই আদাজল চায়ের মতো করে খেলে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, সেই সঙ্গে হজমের সমস্যারও উপকার হয়।
এই আধুনিক যুগেও কোমরব্যথা একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বাস্থ্য সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।
সতর্কতা:
১) খাওয়ার পর বা ভরা পেটে আকুপ্রেসার করা একেবারেই উচিত নয়।
২) দিনে দু’বারের বেশি আকুপ্রেসার করা উচিত নয়।
৩) অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের আকুপ্রেসার করা একেবারেই উচিত নয়।
৪) কোনও একটি নির্দিষ্ট ‘প্রেসার পয়েন্ট এ একটানা ২ মিনিটের বেশি আকুপ্রেসার করা উচিত নয়।
৫) দিনে কখনওই একটানা ২০ মিনিটের বেশি আকুপ্রেসার করা একেবারেই উচিত নয়।
সঠিক পদ্ধতি মেনে আকুপ্রেসার চিকিৎসা পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারলে ওষুধপত্র ছাড়াই শরীরের একাধিক সমস্যা কাটিয়ে সুস্থ থাকা সম্ভব।